বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৭ অপরাহ্ন
আব্দুল্লাহ মারুফ::
এ কথা না বললেই নয়!
আজকে আমি কথা বলবো দক্ষিণ এশিয়ার তথাকথিত ‘ফিল্ম & ড্রামা ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে।
যেখানে চলছে অশ্লীলতা,বেহায়াপনা, কুসংস্কার আর নেগেটিভিটির ছড়াছড়ি। সাধারণ মানুষ সিনেমা নাটকের বিভিন্ন ক্যারেক্টারের সাথে নিজেকে তুলনা করে জীবন পরিচালনা করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে।
এই যে নিজেকে তুলনা করা যা আমাদের জীবনে এক বিপর্যয়ের অনন্য মাত্রায় পৌছিয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি শান্তির আশ্রয় পরিবারকে ধ্বংস করে দিচ্ছে আরো ধ্বংস করছে সমাজ ও দেশকে!
এখন কিছু সাধুব্যক্তিবর্গ আমাকে প্রশ্ন করতেই পারেন ‘কিভাবে নেগেটিভিটি ছড়ানো হচ্ছে?
এখানে বলে রাখা ভালো যে, অশ্লীলতার কথা বাদ পরেছে কারণ সবধর্মগুলোতেই নগ্নতা, অশ্লীলতার কোন স্থান নাই। যেসব নগ্নতা, অশ্লীলতা দেখানো হয় সেসব পশ্চিমাদের মনগড়া সভ্যতা ও সংস্কৃতি। তাদের বাজার চাঙ্গা রাখার উপায়ন্ত মাত্র।
নেগেটিভ চিন্তা যেভাবে ছড়াচ্ছে তা দেখা যাবে চোখ থেকে কাঠের চশমাটা সরিয়ে দিলেই !
প্রথমেই আমি বলতে চাই রাজনীতি নিয়ে!
মুভিতে সর্বদা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দুর্নীতি,খুন-খারাবি ইত্যাদির সাথে জড়িত দেখায় যা মানুষের আস্থা ভঙ্গের অন্যতম কারণ এবং মানুষের একটা মাইন্ডসেট তৈরি হয় এই যে, রাজনৈতিক আশ্রয় নিবো কি করে; তারাতো দুর্নীতিবাজ, তারা দেশ চালাবে কি করে!
দেশের মুল শক্তিই যদি এমন হয় তাহলে দেশ চলবে কি করে আর বাকিদেরই বা কি অবস্থা।
উপরে উল্লেখ করেছি দক্ষিণ এশিয়ার কথা নিশ্চয় মনে আছে।
কারণ, তারাই একমাত্র নিজেদের রাজনীতি, পুলিশ বাহিনীকে দুর্নীতিগ্রস্ত দেখায়।
হলিউড,চীন ও জাপান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিগুলো
যতোযাই করুক নিজের মুল ঠিক রাখে!
বাঙালি মুভিতে প্রায় সকল পুলিশই করাপ্টেড দেখানো হচ্ছে। যাদের হাতে দেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার আমানত দেওয়া হয়েছে তারাই যদি জনগনের আস্থা হারায়, তাহলে কেমন হয় বলেন।
মানুষের মনে একটা ছাপ স্পষ্ট হয়ে আছে যে, পুলিশ অথচ ঘুষ খায় নাহ তা আবার হতে পারে!
যার প্রামাণ্যচিত্র আজকাল মিলছে।
সাইন্টিফিকালি প্রমানিত যে একই কাজ বারংবার দেখলে,শুনলে বা করলে তার একটা প্রভাব আচারনে গেথে যায়। আর সেইসব কাজ সংঘটিত হয় তার নিজের অজান্তেই! হওক সেটা ভালো বা খারাপ।
আর যেহেতু ঘুষখোর পুলিশ ঘুষ খেয়ে বিভিন্ন মার্ডার,অন্যায় কাজ ধামাচাপা দিতে দেখে দেখে মানুষজনের দিন পার হচ্ছে সেহেতু তাদের ঘুষখোর আর খারাপ ভাবাটায় স্বাভাবিক । আর যে কারণে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়লে পুলিশের কাছে যায় নাহ। ভাবে, গিয়ে কি হবে; ন্যায় তো আর পাবো নাহ বা ঘুষ ছাড়া তো আর কাজ করবে না !
এবার আসা যাক নায়ক নায়িকার অধ্যায়ে!
বলা যেতে পারে সবাই নায়ক নায়িকার চরিত্রে অবতরণ করতেই পছন্দ করেন!
কিভাবে নায়ক নায়িকার আচার-আচরণ থেকে তার অনুসারীরা নেগেটিভিটির শিকার হয় তার অল্প কিছু নমুনা তুলে ধরার চেষ্টা করবো -ইনশাআল্লাহ।
প্রায়শই দেখা যায় যে বীরত্বের বেশে নায়ক সিগারেট টানছে ;এখনতো আবার ইয়াবা, ড্রাগ নিতেও দেখা যায়। কখনো আবার প্রেমে ছেঁকা খেয়ে বাকা হয়ে পড়ে আছে;আর ঠিক সেই সময়ে তাদের নিজেদের জন্য সব কিছু হালাল করে নেয়! যেমন সিগারেট খাওয়া,মদ পান করা, মারাপিট করা, ডিপ্রেশনে থাকা ইত্যাদি।
এগুলো কি তার অনুসারীরা শিখবে তাদের তথাকথিত নায়কের কাছ থেকে!
নায়ক তো সেই হতে পারে যে সব বাজে কাজকে উপেক্ষা করে নিজের সেরা টা পরিবার,সমাজ, রাস্ট্র ও বিশ্বকে উপহার দিতে পারে। নায়ক তো তাকেই মানা যায়।
এবার দেখুন নায়িকার কাজ!
সত্যি করে বলুনতো আপনাকে কেও উত্ত্যক্ত করলে কি আপনি পছন্দ করবেন?
অবশ্যই না!
কিন্তু আজব ব্যাপার হলো চেনা নাই জানা নাই নায়ক যদি নায়িকাকে উত্ত্যক্ত করে নায়িকার ভালো লাগে।
এমনো আছে নায়িকাকে জোর করে কিস দিলেও তার কোনো প্রতিবাদ না করে তা উপভোগ্য বিষয় হিসেবে তুলে ধরা হয়। এ আচারন থেকে কি শিক্ষা পেলুম।
জোর জবরদস্তিতে কিস দিলে তার খারাপ লাগা তো দূরের কথা বরং যে এহেন গর্হিত কাজ যে করেছে তার প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া!
এগুলো মোটেও নায়িকার চরিত্রে মানায় নাহ।
আর আমি যদি নাটকের কথা বলতে চাই তাহলে বলতে হবে সমাজ,দেশ আর সবচেয়ে বেশি পরিবারের মেলবন্ধন ধ্বংশের মুল কারণ!
ফিল্ম & ড্রামা ইন্ডাস্ট্রির সাথে মাদকের এক গভীর মিল আছে!
মাদক দ্রব্য সেবন করে ক্ষনিকের জন্য মাতাল হতে পেরে ভালো লাগে যদিও শরীর দেহের মারাত্মক ক্ষতি হয় ঠিক সেইভাবে নাটক সিনেমায় নায়ক নায়িকার স্বর্গীয় অবতারনার চেয়ে বেশি নেগেটিভিটি ছড়ানো হচ্ছে। যা পরিবার, সমাজ, দেশের জন্য ক্ষতিকর।
এখন আরেকটা প্রশ্ন উদ্ভাবনের আশংকা করছি! প্রশ্নটি হলোঃ অন্য কোনো দেশে কি ফিল্ম বা ড্রামা ইন্ডাস্ট্রি নেই?
সহজ করে বলতে চাই যে, অবশ্যই আছে। আমি দক্ষিণ এশিয়ার সিনেমা,নাটক ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে এতক্ষণ কথা বলেছি। যদি আপনি খেয়াল করেন দেখতে পাবেন হলিউডে তারা তাদের দেশের ক্ষমতা, দেশের নিরাপত্তা, কাল্পনিক কাহীনি, মহাকাশ যাত্রা, যুদ্ধ, সাইবার ক্রাইম,টেকনোলজির সর্বোচ্চ ব্যবহার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ইন্ডাস্ট্রি চালাচ্ছে;আর আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায় প্রেমের জন্য দেশ নষ্ট কিভাবে করতে হয় তা শিখানো হচ্ছে !
চীন,জাপানের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখবেন তারা তাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি, কংফু,মার্শাল আর্ট ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সিনেমা তৈরি করছে এবং মুনাফাও বড় অংকের পাচ্ছে;কিন্তু, দক্ষিণ এশিয়ায় ইমোশনাল সিন দেখিয়ে দেখিয়ে সমাজ তো গড়া দূরের কথা নিজেকে আর নিজের প্রেম ঠিক করতে করতেই কবরে পা চলে যাচ্ছে।
আরেকটা কথা ;পশ্চিমারা প্রায়ই মাদকদ্রব্য গ্রহণ করতে দেখা যায়।
এই কথার জবাবে বলতে চাই, আপনি যদি বিষাক্ত সাপ দেখেন অবশ্য এড়িয়েই চলেন তাই নাহ!তাহলে মাদক দ্রব্য ক্ষতিকারক জেনেও যদি এড়িয়ে না চলতে পারেন, তাহলে কিছুই বলার থাকে নাহ।
আবারো একটা কথা বলতে চাই ; খোলামেলা পোশাক সংস্কৃতি ও সভ্যতার নামে মানুষের নজর কাড়া বৈ-কিছুই নয়।
ফ্রী-মিক্সিং, লিভ টুগেদার ইত্যাদি সবধর্মগুলোতেই এইসবের কোনো স্থান নেই; যদিও সিনেমাতে এই সব নোংরা সংস্কৃতির প্রচার প্রসার করা হচ্ছে।
এসব ধ্বংসাত্মক টুপ থেকে নিজেকে বাঁচান,পরিবার, সমাজ ও দেশ কে বাঁচান।
বিনোদনের প্রয়োজন নেই বা নিরুৎসাহিত করছি তা ভুল; আমি চাই সুস্থ বিনোদন।
যা সবার মঙ্গল বয়ে আনবে!
লেখক : আব্দুল্লাহ মারুফ, উদীয়মান কলামিস্ট।